ভাল কোম্পানিগুলো তাদের গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকিং ব্যবহার করে কেন?

ভেইকেল ট্র্যাকিং কি এবং ভেইকেল ট্র্যাকিং কীভাবে ব্যবসার উন্নতি ঘটায়? সম্ভবত এই প্রশ্নটি আধুনিক যুগের প্রায় সকল ব্যবসায়ীর মনেই ঘুরপাক খেয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ব্যবসা ক্ষেত্রে ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ ভেইকেল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে খুব কম সময়ে যেকোনো স্থান থেকেই গাড়ির অবস্থান, গতিবেগ সহ গাড়ির ডিটেইল আপডেট তো পাওয়াই যায়, পাশাপাশি দূর থেকে গাড়িকে কোন কোন ক্ষেত্রে কন্ট্রোলও করা যায়। এমনকি কোম্পানির ট্রান্সপোর্ট কর্মচারীদেরকেও সঠিক মনিটর করা যায়। আপনার ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গাড়িগুলো গাড়ি দেখাশোনা এবং পরিচালনা করেন তারা চাইলেও আপনার কাছে গাড়ির লোকেশন, তেল ইত্যাদি সম্পর্কে কোন তথ্য গোপন করতে পারবে না।

ভেইকেল ট্র্যাকিং / ট্র্যাকার কী?

ভেইকেল ট্র্যাকিং হচ্ছে জিপিএস ডিভাইস গাড়িতে স্থাপন করে সেই গাড়িকে স্যাটেলাইটের সাহায্যে মনিটরিং করা। এই ডিভাইস রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ির লোকেশন সম্পর্কিত তথ্য একত্রিত করে গাড়ির সার্বিক অবস্থান এবং অবস্থা সম্পর্কে গাড়ির মালিককে অবহিত করে থাকে। গাড়ির মালিক মোবাইলে অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমেই গাড়িগুলোকে মনিটর করতে পারেন। কোন রুটে গাড়ি যাচ্ছে তাও দেখতে পারেন। শুধু যে ব্যবসার গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস (ভিটিএস) ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় , বরং আরো অনেক ক্ষেত্রেই গাড়ি সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্যও ভিটিএস ব্যবহার করে থাকেন। যেমন গাড়ি চুরি ঠেকাতে, তেল চুরি ঠেকাতে, দূর থেকে গাড়ির ইঞ্জিন কন্ট্রোল করতে ব্যবসা প্রতিস্থান সহ অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতেও ভিটিএস ব্যবহার করে থাকেন।

এবার আসুন দেখে নেয়া যাক ব্যবসা ক্ষেত্রে ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস কী কী সুফল বয়ে আনতে পারে।

সবগুলো গাড়ি এক অ্যাপের মধ্যে নজরদারি

আপনি যখন আপনার ব্যবসা ক্ষেত্রের গাড়িগুলোতে ভেইক্যাল ট্রাকিং ব্যবহার করবেন, তখন আপনার সব গাড়ির এবং গাড়িতে থাকা কর্মচারীর লোকেশন একই সময়ে মনিটর করতে পারবেন। কোন গাড়ি কোন স্থানে কতক্ষন বসে ছিল। কোন পথে কতক্ষন চলেছে তাও দেখতে পারবেন। তাৎক্ষণিক মনিটরিং তো করা যাবেই, প্রতিটি গাড়ির মাইলেজ, স্পিড, ফুয়েলের রিপোর্ট মাসিক এবং দৈনিক দুইভাবেই করে দিবে ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস। কোন গাড়ি কোন রুটে যাচ্ছে তাও দেখা যাবে। ফলে কোন গাড়ির ড্রাইভার যদি সঠিক বা নির্দেশিত রুটে না গিয়ে অন্য রুটে যায় তাহলে সে গাড়িটিকে ব্যক্তিগত কারণে ব্যবহার করছে কিনা তাও জানা যাবে সহজেই।

হারানো গাড়ি খুঁজতে এবং গাড়ি চুরি ঠেকাতে

আপনার কোম্পানি বা ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি যদি চুরি হয়ে যায় সেটি আপনার ব্যবসার জন্য খুবই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হারানো গাড়ির ক্ষতিপূরণ তো রয়েছেই, পাশাপাশি গাড়ির শর্ট পড়লে হয়ত ব্যবসায়ীক কাজেও বাঁধা আসতে পারে। নতুন গাড়ি কিনতে গেলেও আবার অনেক টাকা খরচ হবে। গাড়ি ভর্তি পণ্য সহ গাড়ি চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হারাতে পারেন কাস্টমার স্যাটিসফেকশন এবং বিশ্বস্ততা। কিন্তু গাড়িতে যদি ছোট্ট একটা ভেইকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখেন তাহলে গাড়ি ট্র্যাক করে জানতে পারবেন গাড়ি কোথায় এবং চুরি যাওয়া গাড়ি উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

ইনভেন্টরির লোকেশন ট্র্যাকিং

ব্যবসা করতে গেলে পণ্য পরিবহণ একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এবং একটি কার্যকরী ব্যবসার পণ্য পরিবহণ এবং পণ্যের ইনভেন্টরি ট্র্যাক করা খুবই জরুরী কাজ। এটা করতে পারলে আপনি সহজেই জানতে পারবেন আপনার পণ্য এখন কোথায় অবস্থান করছে এবং তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে। ফলে আপনি সহজেই কাস্টমারকে জানাতে পারবেন কত সময়ের মধ্যে সে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি হাতে পাবে। এতে করে কাস্টমার স্যাটিশফেকশন বাড়বে। আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়বে।  আর যে গাড়িতে করে পণ্য পরিবহণ করা হচ্ছে সেই গাড়ির শিপিং ক্রু বা ডেলিভারি ক্রু’কেও সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন ফলে কম সময়ে পণ্য পরিবহণ করতে ভেইকেল ট্র্যাকারের বিকল্প নেই!

গাড়ির ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম কমে

যেসব কোম্পানির পণ্য পরিবহণের জন্য বেশ কিছু গাড়ি আছে, সেসব কোম্পানির বাৎসরিক খরচ হসেবে একটা বড় অংশ হিসেবে চলে যায় সেসব গাড়ির ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামের পেছনে। কিন্তু আপনি যদি গাড়ির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে এই প্রিমিয়ামের পরিমান কমে যেতে পারে। ফলে অনেক ইনস্যুরেন্স কোম্পানিই যেসব গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করে সেসব গাড়ির জন্য ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামের উপর ডিসকাউন্ট প্রদান করে। একটি ভেইকেল ট্র্যাকার গাড়িতে লাগিয়ে নিয়ে যদি বছর জুড়ে ইনস্যুরেন্সের ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়, তাহলে কোম্পনির বাৎসরিক খরচ কমে যাবে। যা যোগ হবে মুনাফার খাতায়!

কোম্পানির কর্মচারীর নিরাপত্তায় ভিটিএস

আপনি যদি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন তাহলে আপনাকে কর্মচারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও দায়িত্ব নিতে হয়। ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি কোম্পানির পণ্য পরিবহণ এবং ট্রান্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সুফল পেতে পারেন। কোন কারণে কোন ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ ব্যহত হলে ভেইকেল ট্রাকারের মাধ্যমে যেহেতু তার লোকেশন দেখাযাবে তাই পুনরায় যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। আবার ড্রাইভার বিপদে পড়লে বা বিপদের আভাস পেলে সহজেই আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে।

ফুয়েল খরচ কমায়

যদি আপনার কোম্পানির গাড়িগুলোতে প্রতিদিন বিপুল পরিমান জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তাহলে আপনার ব্যবসার একটি বড় অংকের খরচ চলে যায় এসব গাড়ির জ্বালানির পেছনে। একজন বাবসায়ী হিসেবে আপনার লক্ষ্য থাকবে এই খরচ কমিয়ে আনার। এক্ষেত্রে গাড়িতে একটি ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করাই একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ীর কাজ। কারণ গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করলে যেহেতু গাড়ি সবসময় মনিটরিং করতে পারবেন তাই গাড়ির অযথা এবং অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে ফুয়েল খরচ কমানো যাবে। আর ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিসের ফুয়েল মনিটরিং ফিচারের মাধ্যমে গাড়ির ফুয়েল কখন কতটুকু আছে আর কতটুক রিফিল করা হয়েছে তাও জানা যাবে। ফলে গাড়ির ফুয়েল থাকবে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে।

গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ

গাড়ি একবার কোম্পানি বা অফিসের গ্যারেজ থেকে বের হয়ে গেলে সেই গাড়িকে ও গাড়ির ড্রাইভারকে আর চোখের সামনে পাওয়া যায় না। কিন্তু ভেইকেল ট্র্যাকারই পারে গাড়ি এবং ড্রাইভারের গতিবিধি চোখের সামনে তুলে ধরতে পারে। অনেক সময় কোন কোন ড্রাইভার পথে অনেক স্পিডে গাড়ি চালান। ফলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ক্ষতি হতে পারে আপনার ব্যবসার এবং পণ্যের। কিন্তু একটি ভেইকেল ট্র্যাকার গাড়িতে থাকলে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে গাড়ির স্পিড মনিটর করতে পারবেন এবং ড্রাইভার স্পিডে গাড়ি চালালে তাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনি চাইলে স্পিড লিমিট ঠিক করে দিয়ে দিনশেষে দেখতে পাবেন কতবার গাড়ি এই স্পিড লিমিট অতিক্রম করেছে এবং সেই বিবেচনায় ড্রাইভারের ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করবে

বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবকিছুই গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। চাল ডাল থেকে শুরু করে কম্পিউটার মোবাইল সবই এখন হোম ডেলিভারি হয়ে থাকে। ফলে এই বাজারে টিকে থাকতে হলে আপনাকে সঠিক ও কম সময়ে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে। আর আপনার ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করে আপনি সহজেই ডেলিভারির সময় এবং ডেলিভারি ভ্যান ট্র্যাক করতে পারবেন। অ্যাপ এর মধ্যে গাড়ির অবস্থান দেখেই গ্রাহককে ডেলিভারির সঠিক সময় জানাতে পারবেন।  আবার কোন ডেলিভারিম্যান সঠিক সময়ে পণ্যটি ডেলিভারি করতে পারলো কিনা তাও জানতে পারবেন। আর প্রহরী ডেসটিনেশন এলার্টের মাধ্যমে অটোমেটিক জানতে পারবেন কখন ডেলিভারি হয়েছে।

গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ আরো সহজ হয়

একটি গাড়ির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যদি গাড়িটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। কোন কোম্পানির গাড়িগুলোতে যদি ভেইকেল ট্র্যাকার লাগানো থাকে তাহলে খুব সহজেই গাড়িগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে সবটুকু তথ্য পাওয়া সম্ভব। এবং এইসব হিসাব রেকর্ড আকারেও সংরক্ষণ করা সম্ভব। ভেইকেল ট্র্য্যাকার থেকে সহজেই জানা যাবে গাড়িটি নিকটস্থ সার্ভিস সেন্টারে কয়বার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই গাড়িকে ভাল রাখতে ব্যবসায় ব্যবহৃত গাড়িতে ভেইকেল ট্রাকারের বিকল্প নেই।

পূর্বে ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করা যতটা ব্যায়বহুল ছিল, তার তুলনায় বর্তমানে খুবই সুলভে ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস পাওয়া যায়। ভেইকেল ট্র্যাকার লাগাতে প্রতি গাড়িতে এখন যে পরিমান খরচ এবং সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয় তা আপনার ব্যবসার মুনাফার জন্য খুবই যুগোপযোগী একটি ডিভাইস। আর এজন্যই বিশ্বের ভাল ভাল এবং মুনাফা লাভ করা কোম্পানিগুলো তাদের গাড়িতে সবসময় একটি ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করে থাকেন। কারণ তারা জানেন, ভেইকেল ট্র্যাকিং ব্যবহার করার মতো বুদ্ধিমান সিধান্তই তাদের অনেক খরচ বাঁচিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করতে সাহায্য করে। এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে ভেইকেল ট্র্যাকার প্রহরী। প্রহরী ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করে সহজেই আপনার কোম্পানির উন্নতি করা সম্ভব!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top