নবম শ্রেণির শুরুর দিকে দারুণ কিছু ঘটনা ঘটে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, চতুর্থ শ্রেণি বা পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ‘প্রথম সারির স্টুডেন্টরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে পারবে, শেষের সারিরগুলো পারবে না’ এমন একটি বার্তা শিক্ষার্থীদের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে নবম শ্রেণিতে উঠে শেষের সারির শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে যাওয়ার সাহস তো পায়ই না উল্টো প্রথম সারির অনেকেই বিজ্ঞান বিভাগ নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
কিছু কিছু অভিভাবক ও শিক্ষক তো আরো একধাপ এগিয়ে। কোন শিক্ষার্থী নিজে থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চাইলে তারা বিস্ময় আর সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে বলেই ফেলে ‘পারবি তো!’ যার ফল, বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী কম! যারা বিজ্ঞান বিভাগ নেয় তারাও ছোটবেলা থেকে শুনে আসা ‘বিজ্ঞান কঠিন’ এই ধারণা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানকে উপভোগ করতে পারে না।
নবম শ্রেণির শুরুর দিকে আরো একটি দারুণ ঘটনা ঘটে ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে দারুণ একটা উত্তেজনা, উৎসাহ আর কৌতূহল কাজ করে। এই উৎসাহ আর কৌতুহল দেখে বোঝার উপায় নেই তারা বিজ্ঞানকে কঠিন ও বিরক্তিকর বিষয়ই জেনে এসেছে এতদিন।
কিন্তু একই সাথে খারাপ লাগা ও অবাক করা বিষয় হলো, নবম-দশম শ্রেণির দুই বছর ধরেই আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের ভালো লাগা ও উৎসাহের এই হাতে-কলমে বিজ্ঞান বিষয়টি মাত্র হাতেগোনা কয়েকদিনই করতে পারে। নবম শ্রেণির আগে তারা বিজ্ঞানের এই ব্যবহারিক বিষয়টির সাথে পরিচিত হতে পারে না।
এবার পুরো বিষয়টিকে আমরা অন্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি চলুন। আমাদের শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে শুরু করেছে। ক্লাসের পড়া নয়, স্রেফ খেলনা বা অবসর কাটানোর আনন্দের একটা অংশ হিসেবে তারা বিজ্ঞানের মজার মজার সব বিষয় হাতে-কলমে করে দেখা শুরু করেছে। নবম শ্রেণিতে ব্যবহারিক ক্লাস করার উন্মাদনা, উত্তেজনা আর উৎসাহটা তারা একদম ক্লাস ওয়ান থেকে পাওয়া শুরু করেছে।
কী হবে? হ্যাঁ, পুরো দৃশ্যপটই উল্টে যাবে। বিজ্ঞান তাদের কাছে মোটেও আর কঠিন ও বিরক্তিকর সাবজেক্ট থাকবে না। বিজ্ঞান হয়ে উঠবে উপভোগের একটি বিষয়।
অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সে কিংবা দেশি-বিদেশী যেকোন সায়েন্সকিটের সাথে পরিচিতি থাকলে আপনি ইতোমধ্যে জানেন, শিশুদেরকে ছোট থেকেই সৃজনশীল, বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে, শিশুদের বিজ্ঞান ভীতি দূর করে বিজ্ঞান তাদের কাছে উপভোগ্য ও আনন্দময় করে তুলতে সায়েন্সকিটগুলো কতটা উপকারী। অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স সম্পর্কে না জেনে থাকলে এই লিংক থেকে জেনে নিতে পারেন।
আমরা আজকে কথা বলবো, অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সের প্রথম ক্লাস ভিত্তিক কিট পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স নিয়ে।
পঞ্চম শ্রেণি কেন গুরুত্বপূর্ণ? সেখানে পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্সই বা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পঞ্চম শ্রেণি অনেক কারণে গুরত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, পঞ্চম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীরা উচ্চতর ধারার বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়। আর পঞ্চম শ্রেণিতে বিজ্ঞানের প্রতি তার ভালোলাগা বা খারাপ লাগাই তার সামনের দিনগুলোর বিজ্ঞান পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে। একদম নির্দিষ্ট করে যদি বলি, পঞ্চম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞানকে উপভোগ করা শুরু করলে সে শিক্ষা জীবনের সামনের দিনগুলোতেও বিজ্ঞান উপভোগ করবে আর খারাপ লাগলে বা উপভোগ করতে না পারলে সামনের দিনগুলোয় সে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ হারাবে। সেহেতু এই সময়ে বিজ্ঞানের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আর এই বিষয়টি চিন্তা করেই পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স নিয়ে এসেছি আমরা।
নবম শ্রেণিতে প্রথম প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করার সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে যে উত্তেজনা, উৎসাহ থাকে সেটাকে নিয়ে আসতে চেয়েছি পঞ্চম শ্রেণিতে। আমাদের সন্তানেরা পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বিজ্ঞানকে উপভোগ করবে, উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে পড়বে।
পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্সে পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের সব অধ্যায়ের সবগুলো থিওরি হাতে-কলমে শেখার জন্য সব ধরনের ইন্সট্র্যুমেন্টসহ দিক-নির্দেশনা দেয়া আছে।
বইয়ের সবগুলো এক্সপেরিমেন্ট হাতে-কলমে করতে পারার ফলে একজন শিক্ষার্থীর কাছে বিজ্ঞান সত্যিকার অর্থেই উপভোগ্য ও আনন্দময় হয়ে উঠবে। বিজ্ঞান বুঝবেও সহজে।
আমার সন্তানকে যদি বিজ্ঞান বিভাগে না পড়াই তাহলে তার বিজ্ঞান নিয়ে এত জানারই বা কী দরকার?
খুবই স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন। চলুন একটু গভীরে ভাবি! একটা গবেষণা নিয়েই কথা বলা যাক।
আমেরিকার শিকাগো শহরের লয়েলা ইউনিভার্সিটির এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট বিভাগ ২০১০ সালে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। গবেষণাপত্রটির বিষয় ছিলো আর্লি চাইল্ডহুডে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা।
সেখানে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান কোন লেসন বা অধ্যায় নয়। বিজ্ঞান হলো শেখার একট পদ্ধতি। কী শিখতে হবে তা বিজ্ঞান শেখায় না, বিজ্ঞান শেখায় কীভাবে শিখতে হবে।
আর্লি চাইল্ডহুডে বিজ্ঞান শিশুদের কৌতূহলী করে তোলে, প্রশ্ন করতে শেখায়, আবিষ্কার করতে শেখায়, সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখায়, পর্যবেক্ষন ক্ষমতা বাড়ায়। ছোট থেকে বিজ্ঞান শেখার ফলে শিশুদের কী কী স্কিল ডেভেলপ হয় তার দারুণ একটা চার্টও করে দেখানো হয়েছে এই গবেষণাপত্রে।
পড়ালেখা থেকে শুরু করে জীবনের যেকোন পর্যায়ে একজন মানুষের যেসব স্কিলের দরকার, বিজ্ঞান শেখার ফলে ছোট থেকেই সেসব স্কিল তার ভেতরে গড়ে উঠে।
STEM education field নামে একটা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত বিশ্বে বেশ পরিচিত। STEM বলতে Science, Technology, Engineering এবং Mathematics এই চারটি শিক্ষাক্ষেত্রকে একসাথে বোঝানো হয়। বিশ্বের উন্নত সকল দেশ তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এই চারটি বিষয়কে অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখে। তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও গড়ে তুলছে প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত করেই। বিজ্ঞানের ভিত গড়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে একদম আর্লি চাইল্ডহুড থেকেই।
আর্লি চাইল্ডহুডে বিজ্ঞানের ভিত গড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে শিশুদেরকে বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া জরুরী। কিন্তু সেই পরিচয়টা কীভাবে হবে, তার উপরই নির্ভর করছে আপনার সন্তান বিজ্ঞানকে ভালোবাসবে, উপভোগ করবে নাকি বিজ্ঞান তার ভেতরে ভীতি তৈরি করবে নাকি বিজ্ঞান তার কাছে বিরক্তিকর একটা বিষয়ে পরিণত হবে!
আপনার সন্তানকে ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন, তাকে এক্সপ্লোর করতে শেখান, তার ভেতর আরো বেশি বেশি জানার আগ্রহ জন্মান, তাকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।