যে কারণে আপনার সন্তানকে কারাতে শেখানো উচিত

যে কারণে আপনার সন্তানকে কারাতে শেখানো উচিত

মার্শাল আর্ট বা কুংফু কারাতের কথা বললেই নিশ্চয়ই আমাদের প্রথমে মাথায় আসে ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান কিংবা জেট লির কথা তাই না? এই মার্শাল আর্টের আরেকটা মাধ্যম হচ্ছে কারাতে। মূলত কারাতে, কুংফু, মার্শাল আর্ট যে নামেই ডাকিনা কেন মূল উদ্দেশ্য একই। এক এক দেশে এক এক নামে ডাকে – ব্যান্ডো, বুদোকান, সিতু-রিও, সোতোকান, গুজা-রিও, উদা-রিও, হাফকিডো, খিউকেশিং, তাইকোয়ান্দ, কিক-বক্সিং ইত্যাদি।

এখন আমাদের দেশেও অনেকে কারাতে প্র্যাকটিস করে থাকে। কিন্তু কারাতে প্র্যাকটিস করলে কী লাভ? আজকের এই ব্লগে আমরা কারাতে শেখার উপকারী ৭ টি দিক নিয়ে আলোচনা করব। তবে তার আগে ছোট্ট করে জেনে আসি কারাতের ইতিহাস।

কারাতে একটি জাপানী শব্দ। কারা -অর্থ খালি, তে -অর্থ হাতে, কারাতে অর্থ খালিহাতে। খালিহাতে যুদ্ধ করার কলা কৌশলকে কারাতে বা মার্শাল আর্ট বলে।

কারাতের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপাত্ত জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেন এর আদি উৎপত্তি তিব্বতে। হাজার হাজার বছর আগে কোন এক ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মগুরু চীনের একটি ছোট উপাসনালয়ে প্রথমবারের মত নিয়মতান্ত্রিক কিছু ব্যায়ামের প্রচলন করেন। দেহ ও মনকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত এই কৌশল বর্তমানে কারাতে নামে প্রচলিত। আবার অনেকে মনে করেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বন্য ও হিংস্র প্রানীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করত। সেখান থেকেও কারাতের বিবর্তন হতে পারে।

কেন কারাতে শিখবো?

কারাতে শেখার বা প্র্যাকটিস করার অনেক কারণ রয়েছে তবে আজ আমরা এখানে ৫ টি কারণ নিয়ে কথা বলব।

১. সেলফ ডিফেন্স বা আত্মরক্ষা-

পৃথিবীর যেকোন বয়সের যেকোন মানুষের কাছে আত্মরক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউই অনিরাপদ থাকতে পছন্দ করে না। আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এ কাজ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে অপরাধ না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

তাই এই কারাতে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আপনি আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করতে পারবেন দারুণভাবে। জানতে পারবেন নিজেকে রক্ষা করার দারুন সব কৌশল।

২. ফিটনেস-

কারাতে শেখার দ্বিতীয় ও আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ ফিটনেস। প্রবাদ আছে- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। হ্যা, এই প্রবাদকে সত্যি করবে কারাতে প্র্যাকটিস। কারাতে ট্রেনিং এর মাধ্যমে উন্নতি ঘটবে শরীরের স্ট্যামিনা, স্ট্রেংথ, স্পিড ও ফ্লেক্সিবিলিটির। এছাড়াও কারাতে ট্রেনিং এর কারনে বাড়বে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সামগ্রিক বডি ফিটনেসের উন্নতি ঘটবে। শরীরের প্রত্যেকটি পেশী অনেক শক্তিশালী ও উন্নত রাখবে এই প্র্যাকটিস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কারাতে চমৎকার কাজ করে। এক কথায় কারাতে ট্রেনিং আপনাকে ফিজিক্যালি ফিট এবং সুস্থ রাখবে।

৩. কনফিডেন্স-

কারাতে ট্রেনিং মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারনা তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে ভয়কে জয় করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারাতে ট্রেনিং এর মাধ্যমে নিজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ও ভিন্ন মানুষে রূপান্তর করা সম্ভব। এই কনফিডেন্স এর মাধ্যমে নিজেকে, নিজের শরীর, ক্ষমতা ও মনকে কন্ট্রোল করে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করবে।

৪. শৃঙ্খলা-

কারাতে প্র্যাকটিস একটি গুরুমুখী বিদ্যা যেখানে গুরুর নির্দেশে অনেক শৃঙ্খলের মধ্যে প্র্যাকটিস করতে হয়। কারাতে প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে সব সময় একজন প্রধান প্রশিক্ষক থাকে। এই প্রশিক্ষকের নির্দেশ মতে এখানে সকল প্রকার ট্রেনিং হয়ে থাকে। আর্মির মত এখানেও অমান্য করার কোন জায়গা নেই। এই শৃঙ্খল এর মাধ্যমে তৈরি হয় বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, আত্মশাসন এবং আত্মমর্যাদা।

৫. ফোকাস-

বর্তমান সময়ে আমাদের অন্যতম বড় দুর্বলতার জায়গা হচ্ছে কোন কিছুতেই আমাদের ফোকাস থাকে না। আমাদের নিজেদের উপর নিজেদের ফোকাসে ঘাটতি, বাচ্চাদের পড়াশুনায় ফোকাসের সমস্যা, আমাদের চারপাশ নিয়ে ফোকাস নেই। আমাদের বোধে, চৈতন্যে, মনে, শরীরে ফোকাস নেই। প্রতিদিন আমাদের জীবনে এতো বেশি ঘটনা ঘটছে যে আমরা কিছুতেই কোন কিছুতে ফোকাস করতে পারছি না।

যে কোন কাজে সফলতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে শতভাগ মনোযোগ, ধৈর্য ও অধ্যবসায়। এই তিনটি গুণ মানুষের মাঝে হুট করেই চলে আসে না। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে মানুষ মনোযোগ, ধৈর্য ও অধ্যবসায়কে একই সুতোয় আনতে পারে। বিজ্ঞানবাক্সের ফোকাস চ্যালেঞ্জ স্মার্ট কিট ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করবে।বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

কারাতে এমন কিছু ব্যায়াম বা কৌশল আছে যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফোকাস বা মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আর ফোকাস মন ও মস্তিষ্ক কে রাখবে শান্ত ও স্থির।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

Scroll to Top